কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি

কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপিঃ এর কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা প্রদান

বর্তমানে কোমর ব্যথা শব্দটির সাথে প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত। কোমর ব্যথা উপশমে কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কারনে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নানাবিধ অনিয়মের কারনেই কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ভারী কিছু তুলতে যাওয়া, বার্ধক্যের কারনে হাড় ক্ষয় ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারনে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। কোমর ব্যথা অনেকের দীর্ঘমেয়াদীভাবে হয়ে থাকে যার ফলে তারা দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

কোমর ব্যথার এই সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি সেবা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালণ করে থাকে। এটি বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। কোমর ব্যথা উপশমে অনেক ফিজিওথেরাপির বিভিন্ন ব্যায়াম ও অন্যান্য থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে কোমর ব্যথাকে সাড়িয়ে তোলা যায়। 

কোমর ব্যথার কারণঃ

      মাংসপেশি ও লিগামেন্টে চাপ পাওয়ার কারণে কোমর ব্যথাঃ মাংসপেশীতে কিংবা লিগামেন্টে চাপ প্রয়োগ করা হলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কিংবা ভারী কোন বস্তু তুলতে গেলে হঠাৎ করে কোমর ব্যথা শুরু হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে কোমর ব্যথা সেভাবে লক্ষ্য না করা গেলেও এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা হিসেবে শুরু হতে থাকে।

      ডিস্ক সমস্যার কারণে কোমর ব্যথাঃ ডিস্ক বা ডিস্কের ক্ষয়ের কারনে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। ডিস্কের ক্ষয়ের কারণে নার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে যার ফলে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। কোমর ব্যথা সৃষ্টির এটিও একটি অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

      হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে কোমর ব্যথাঃ হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে কোমর ব্যথা শুরু হতে থাকে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় সাধারণত বার্ধ্যক্য জনিত সমস্যায় যখন কেউ যায় তখনই কোমরের ব্যথা প্রখর হতে শুরু করে।

      স্কোলিওসিস এর কারণে কোমর ব্যথাঃ স্কোলিওসিস কিংবা হাড় যখন বেঁকে যায় তখন কোমর ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। হাড়ের ওপর প্রচন্ড চাপ যখন সৃষ্টি হয় তখন কোমর ব্যথা শুরু হতে থাকে। এটি কোমর ব্যথার জন্য অন্যতম দায়ী কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

কোমর ব্যথার উপসর্গঃ

      স্টিফনেসঃ কোমর নাড়াতে অসুবিধা বা কোমর শক্ত মনে হওয়া স্টিফনেস এর একটি অন্যতম লক্ষণ হিসেবে অনুমান করা হয়ে থাকে। স্টিফনেস প্রাথমিক পর্যায়ে খুব কম পরিলক্ষিত হয় কিন্তু দিন দিন এর লক্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে।

      অ্যাচিং বা ডাল পেইনঃ কোমরে স্থায়ী বা সময়ে সময়ে ব্যথা অনুভ‚ত হওয়াকে অ্যাচিং বা ডাল পেইন বলা হয়ে থাকে। অ্যাচিং বা ডাল পেইনের ফলে কোমরে হাল্কা কিংবা বেশি ব্যথা অনুভূত হতে থাকে।

      উইকনেস বা কোমরের দূর্বলতাঃ এটির ফলে আপনার পা কিংবা কোমরকে অনেক দূর্বল মনে হতে থাকবে। মাঝে মাঝে এমনও মনে হবে যে, কোমরে কোন ধরনের শক্তি পাওয়া যাবে না। এটিও কোমরের হাড় ক্ষয় অন্যান্য কারনে হতে পারে।

      নাম্বনেস হওয়াঃ নাম্বনেস হলে কোমরে কিংবা পায়ে অনুভ‚তির ঘাটতি দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এটিকে কম ব্যথার কারণ হিসেবে ধরলেও দিন দিন এটির প্রবণতা বেশি হতে থাকে। অন্তিম পর্যায়ে হঠাৎ করে কোমরে অধিক ব্যথা পরিলক্ষিত হতে থাকে।

কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা-

ফিজিওথেরাপি কোমর ব্যথা উপশমে বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাকে। ফিজিওথেরাপিকে কোমর ব্যথার ক্ষনস্থায়ী কিংবা দীর্ঘস্থায়ি চিকিৎসা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং মুভমেন্ট রেঞ্জ আরও বেশি তরান্বিত করতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা যেমন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি এসকল ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদানে একজন প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট এরও প্রয়োজনীয়তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি এর কার্যকারীতাঃ

      স্ট্রেচিং এক্সারসাইজঃ কোমরের পেশি এবং লিগামেন্ট এর স্ট্রেচ করে কোমরে নমনীয়তা বাড়াতে বেশ কার্যকরী এই পদ্ধতি।

      থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে কোমরের ব্যথা কমাতে এবং শক্তি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম প্রয়োগ করানো হয়।

      এরোবিক এক্সারসাইজঃ এই ব্যায়ামের মাধ্যমে কোমরের ব্যথা কমাতে পুরো শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে এবং ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী।

      ম্যানুয়াল থেরাপিঃ হাল্কা হাতের কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসেজের মাধ্যমে পেশিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

      মবিলাইজেশন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে মবিলিটি বাড়াতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালণ করে।

      ইলেকট্রথেরাপিঃ বৈদ্যুতিক নানা রকম যন্ত্র ব্যবহার করে যে থেরাপি দেওয়া হয় তাই ইলেকট্রথেরাপি হিসেবে পরিচিত। ইলেকট্রথেরাপির মাঝে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমনঃ টেনস, আলট্রাসাউন্ড থেরাপিসহ অন্যান্য পদ্ধতি ইলেকট্রথেরাপির মাঝে পরে।

      হিট অ্যান্ড কোল্ড থেরাপিঃ কোমরের ব্যথা এবং ফোলাভাব কমানোর জন্য হিট প্যাড এবং আইস প্যাক ব্যবহার করে ব্যথা ও ফোলাভাব কমানো হিট অ্যান্ড কোল্ড থেরাপি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

      পোসটুরাল এডুকেশনঃ এই পদ্ধতি রোগীকে সঠিকভাবে বসানো শেখা, দাঁড়ানো এবং চলাচল করানো শেখানো হয় যাতে করে কোমরের ব্যথা কমে এবং শারীরিক কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায়। এ থেকে বোঝা যায় কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি সেবা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির উপকারিতাঃ

      প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপি সেবা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালণ করে থাকে। এটির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি মেয়াদে ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। যেটি একটি রোগীকে সস্তিদায়ক অবস্থানে নিয়ে যেতে কার্যকর।

      ফিজিওথেরাপি সেবা গ্রহণের ফলে অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি কিংবা অস্ত্রপাচার এড়িয়ে কোমর ব্যথাসহ বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের উপশম প্রদান করা সম্ভব। এর ফলে রোগী আর্থিক দিক থেকে শুরু করে সামগ্রিক সকল বিষয়ে বেশ উপকারিতা পেয়ে থাকেন।

      দীর্ঘমেয়াদি সমাধানঃ ফিজিওথেরাপি সেবা গ্রহনের ফলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পাওয়া যায়। মাংসপেশী এবং জয়েন্টের স্থায়ী উন্নতির জন্যও ফিজিওথেরাপি কার্যকর ভূমিকা পালণ করে।

      জীবনযাত্রার মান উন্নয়নঃ ফিজিওথেরাপি সেবা গ্রহনের ফলে ব্যথা মুক্ত দৈনন্দিন জীবনের ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়। যার ফলে ফিজিওথেরাপি সেবা গ্রহিতা আরও কর্মক্ষম এবং সাচ্ছন্দে থাকতে পারে।

কোমর ব্যথা উপশমে আমাদের ফিজিওথেরাপি সেবা ও আথ্রাইটিস কেয়ার সেন্টার নিকুঞ্জ, ঢাকাকে আপনার প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখতে পারেন নির্দ্ধিদ্বায়।

ঢাকার ক্ষিলখেত, নিকুঞ্জে অবস্থিত আমাদের ফিজিওথেরাপি সেবা ও আথ্রাইটিস কেয়ার সেন্টার নিকুঞ্জ, ঢাকা একটি স্বনামধন্য ফিজিওথেরাপি সেন্টার। আমরা অনেক আগে থেকেই ফিজিওথেরাপির সকল সমস্যা সমাধানে রোগীদের সেবা প্রদান করে আসছি পরম আন্তরিকতায়। আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টগণ ফিজিওথেরাপির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালণ করে থাকে।

তারই ধারবাহিকতায় কোমর ব্যথা উপশমের জন্য আমাদের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে রয়েছে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টগণ। যারা উপরিউক্ত সকল ধরনের উন্নত ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে আপনার কোমর ব্যথাকে উপশম করিয়ে দিতে পারে সহজভাবে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের উদ্দেশ্যে একটি চাওয়া আপনাদের যত দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা হোক না কেনো আপনি আমাদের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে আসুন আর গ্রহণ করুন কোমর ব্যথা উপশমে কার্যকরী সকল ফিজিওথেরাপি সেবা। আমরা আপনাদের সেবা প্রদানে সর্বদা আন্তরিক।

আমরা জানি কোমর ব্যথা একটি সাধারণ বিষয় কিন্তু এটি বেশ কষ্টকর। একজন রোগীর দৈনন্দিন নানা কাজকে ব্যহত করতে পারে এই কোমর ব্যথা। কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকর এবং প্রমাণিত পদ্ধতি যা ব্যথা কমাতে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতাকে বাড়াতে সহায়ক।

 ফিজিওথেরাপি সেবার মাধ্যমে কোমর ব্যথার চিকিৎসা গ্রহন করে আমাদের জীবনকে আমরা আরও আনন্দময় এবং কর্মক্ষম করে তুলতে পারি। কোমর ব্যথার এই সমস্যাকে চির বিদায় জানাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন০১৯১৭-৭৮৯৮৪৩ এই নাম্বারে। তাছাড়াও আপনি ফ্রি পরামর্শ পেতে কল করুন আমাদের নাম্বারে।

Leave a Reply

Related Post: